কলারোয়া (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি \ সাতক্ষীরার কলারোয়া পৌর এলাকার তুলসীডাঙ্গা গ্রামের নার্গিস বেগম তার স্বামী রফিকুল ইসলামের আয় দিয়ে সংসার ও ছেলেদের লেখা-পড়ার খরচ জোগাতে হিমসিম খাচ্ছিলেন। তখন তিনি চিন্তা করেন কিভাবে ছেলেদের লেখা পড়ার খরচ জোগানো যায়। এই চিন্তা করে তিনি কিছু আয় করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। এরপর তিনি ২০০৯ সালে পাশ^বর্তী দর্জি রিপনের মুখে সুদ মুক্ত ঋণের কথা শুনতে পেয়ে মুসলিম এইড বাংলাদেশ (কলারোয়ার তুলসীডাঙ্গা মাঠপাড়া সমিতি) সদস্য হন। প্রথমে সেখান থেকে ২০ হাজার টাকা ঋন নিয়ে গাভী পালন করার সিদ্ধান্ত নেন। এর ধারাবাহিকথায় মুসলিম এইড বাংলাদশ হতে প্রথম বিশ হাজার টাকা ঋন নিয়ে একটি বকনা বাছুর ক্রয় করেণ। সেটি বড় করে চলিশ হাজার টাকায় বিক্রি করেন। এতে তার বেশ লাভ হওয়ায় আরও ভাল ভাবে গরু পালনের সিদ্ধান্ত নেন। তারপর আবার মুসলিম এইড থেকে ২য় বার ত্রিশ হাজার টাকা লোন এবং গচ্ছিত টাকা দিয়ে আবার একটি গরু ক্রয় করেন। সেটি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে একটি বকনা বাছুর সহ গাভী ক্রয় করেন। যা প্রতিদিন প্রায় ৪/৫ কেজি দুধ দেয়। গাভীটি এক বছর পালন করার পর সত্তর হাজার টাকা বিক্রয় করেন। ৩য় বার পঞ্চাশ হাজার টাকা ঋণ নিয়ে নিজের টাকা দিয়ে আরও একটি গাভী ক্রয় করেন। যার দুধ বিক্রি করে ছেলেদের লেখা পড়ার খরচ জোগাতে থাকেন। এক বছর পালন করে পচাত্তর হাজার টাকা বিক্রয় করেন। এভাবে তিনি কয়েক দফায় কলারোয়া মুসলিম এইড সমিতি থেকে ১২/১৩ লাখ টাকার লোন নিয়ে গরুর খামার করেন। তার খামারে বর্তমানে ১৬টি গরু আছে। তিনি এর মধ্যে থেকে ১৩টি গরু বিক্রয় করে দিয়েছেন। এই গরু বিক্রয় করা লাভের টাকায় তিনি মাঠে কৃষি জমি ক্রয় করেছেন। বর্তমানে তিনি দেড় বিঘা জমির মালিক হয়েছে। তার কুড়ে ঘর এখন পাকা ছাদের বাড়ীতে পরিনত হয়েছে। তার স্বামী রফিকুল ইসলাম এখন তিনটি দোকানের মালিক, ইট ব্যবসায়ী ও রকিব ডেইরী ফার্ম এর মালিক। গরুর খামার মাঝে মধ্যে তার স্কুল পড়–য়া ছেলে রাকিবুল ইসলামও দেখা শুনা করেন। বর্তমানে তার সংসার এখন সুন্দর ভাবে চলছে। নার্গিস বেগম বলেন, আমি এখন ভাল আছি। আমার সংসার ভালভাবে চলছে। মুসলিম এইড বাংলাদেশ এর প্রতি আমি সন্তুষ্ট। তার মতে মুসলিম এইড এর তুলসীডাঙ্গার মাঠপাড়া সমিতির আরও অনেক সদস্য স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। মুসলিম এইড বাংলাদেশ কলারোয়া শাখা ব্যবস্থাপক রবিউল ইসলাম জানান, দরিদ্র জনগোষ্টীর দারিদ্রতা বিমোচনের জন্য স্বল্প সার্ভিস চার্জ ও সহজ কিস্তিতে মাইক্রো ফাইন্যান্স ও এসএমই বিনিয়োগ প্রদান এবং অতি দ্ররিদ্রদের মাঝে সুদ ও সার্ভিস চার্জ মুক্ত ‘‘অতি দরিদ্র” লোন প্রদান করা হচ্ছে। মুসলিম এইড বাংলাদশ ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে কাজ করছে। সাপ্তাহিক উঠান বৈঠকের মাধ্যমে বাল্য বিবাহ রোধ, পরিবার পরিকল্পনা, প্রাথমিক স্বাস্থসেবা, নারীর ক্ষমতায়ন বিষয়ে আলোচনা করা হয়। যা এই অঞ্চলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়ন সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি আরও বলেন, মুসলিম এইডের জন্ম হয়েছে সমাজের অবহেলিত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য। বাংলাদশে ১৯৯১ সাল থেকে চট্টগ্রাম ত্রান ও পূনর্বাসনের কার্যক্রম দিয়ে মুসলিম এইডের যাত্রা শুরু হয় এবং মুসলিম এইড সবসময় অসহায় ও অবহলিত মানুষের পাশে এসে দাঁড়িয়েছে।